মুমিনুল হক নিজেই একটা সিলেবাস তৈরি করেছেন। সেখান থেকে নিজেই বানিয়ে নেন প্রশ্ন। তারপর নিজে নিজে প্রশ্নের উত্তর খোঁজেন। কখনো পান, কখনো পান না। কাল বেশির ভাগ প্রশ্নেরই উত্তর মিলে গেল। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম দেখল টি-টোয়েন্টির মুমিনুল হককে।
এমন নয় যে মুমিনুল কাল মিরপুরে খুব ধুন্ধুমার ব্যাটিং করেছেন। খুলনা টাইটানসের বিপক্ষে মেরেকেটে জিতিয়েও দেননি রাজশাহী কিংসকে। উল্টো ১৩৩ রানের লক্ষ্য টপকাতে না পেরে রাত কাটিয়েছেন অন্তর্জ্বালায়। তবু টি-টোয়েন্টির ব্যাটসম্যান হিসেবে বাংলাদেশে যাঁর স্বীকৃতি নেই, এক বছর পর টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নেমে ৫৭ বলে ৬৪ রানও তাঁর কাছ থেকে বিরাট প্রাপ্তি। জাতীয় দলের কোচ-নির্বাচকেরা মুমিনুলের ব্যাটিং-সামর্থ্যকে যে তুলাদণ্ডে মেপে থাকেন, অন্তত সেটার বিবেচনায় কাল তিনি অবশ্যই টি-টোয়েন্টির ব্যাটিংই করলেন।
অফ স্টাম্পের বাইরে বলে দুর্বল বলে সীমিত ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্রাত্য হয়ে আছেন মুমিনুল। টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে
—দুই সংস্করণের ক্রিকেটেই তাঁর সর্বশেষ স্মৃতি দুটি বিশ্বকাপ। শেষ আন্তর্জাতিক ওয়ানডেটি খেলেছেন গত বছর অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে। টি-টোয়েন্টি খেলেছেন তারও এক বছর আগে। ঘরের মাঠে ২০১৪-এর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।
মাঝে টি-টোয়েন্টিতে দৃশ্যমান ছিলেন শুধু গত বিপিএলে। প্রশ্নটা এখানেই। এই এক বছরে মুমিনুল কী এমন করলেন যে, ২০ ওভারের ক্রিকেটের সঙ্গে এত সুন্দর মানিয়ে নিতে পারছেন? টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ না হয়েও দলের অর্ধেক রান করে ফেলেন একাই! সেটাও ওপেনার হিসেবে। রাজশাহীর কোচ সরওয়ার ইমরান জানালেন, ‘আমরা ওকে ওপেনার হিসেবেই দলে নিয়েছি। মুমিনুলও টি-টোয়েন্টিতে ওপেনার হিসেবে খেলার জন্যই প্রস্তুতি নিয়েছে।’
রাজশাহী কিংসের কোচ মুমিনুলের টি-টোয়েন্টি সামর্থ্যেও কোনো ঘাটতি দেখেন না। প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা আরেকটু কম হলে তিনিও অনায়াসে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলতে পারতেন বলে বিশ্বাস ইমরানের। কাল রাতে মুঠোফোনে এ নিয়ে কথা বলার সময় মুমিনুল মেলে ধরলেন তাঁর সিলেবাস, জানালেন টি-টোয়েন্টিতেও এখন কীভাবে ‘কমন’ পড়ে যাচ্ছে সব প্রশ্ন, ‘অনুশীলনে টেকনিক্যাল কিছু কাজ করেছি। জায়গায় দাঁড়িয়ে কীভাবে শট খেলা যায়, বোলারের চিন্তাভাবনা বোঝার চেষ্টা করা। এগুলো করে বেশির ভাগ প্রশ্নই এখন কমন পড়ে যাচ্ছে। আজ (গতকাল) যে বলে আউট হলাম, সেটাও প্রায় বুঝে গিয়েছিলাম। বল একটু আস্তে আসাতেই সমস্যাটা হলো।’ ছোট্ট এই ভুল হোটেলে ফেরার পরও স্বস্তি দিচ্ছিল না তাঁকে, ‘ম্যাচটা হারা ঠিক হয়নি আমাদের। জেতা ম্যাচ ছিল। আমি আরেকটু থাকলেই হতো…।’
গত বিপিএলের পর থেকেই স্থানীয় কোচদের সাহায্য নিয়ে টি-টোয়েন্টিতে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবু মাঝেমধ্যে প্রশ্ন কমন পড়ে না। মুমিনুলের ভাষায়, ‘শরীরের অবস্থান সব সময় ঠিক রাখতে পারি না। এদিক-সেদিক নড়ে যায়।’ তবে আরেকটা কাজে এই এক বছরেই দারুণ সফল। সেটা হলো বোলারের শরীরী ভাষা বোঝা, ‘টি-টোয়েন্টিতে ভালো ব্যাটিং করতে হলে এটা বোঝা বেশি জরুরি। বোলারের চিন্তাভাবনাটা আপনাকে ধরতে হবে। বেশির ভাগ সময় ফিল্ডিং পজিশন দেখেই সেটা বোঝা যায়। এর বাইরেও কিছু কৌশল আছে।’
এবারের বিপিএলের আগে আলাদা করে প্রস্তুতি নিয়েছেন প্রতিপক্ষের বোলারদের নিয়ে। কে কোন পরিস্থিতিতে কী ধরনের বোলিং করে, স্লগ ওভারে কার কী শক্তি—টি-টোয়েন্টির পুরোনো ভিডিও দেখে বোঝার চেষ্টা করেছেন সেসব। বাকিটা চেষ্টা করছেন খেলে খেলে শিখতে। মুমিনুলের ভাষায়, ‘যা-ই করুন, টি-টোয়েন্টি খেলা শুধু অনুশীলন করে পুরোপুরি শিখতে পারবেন না। এটা খেলে শেখার জিনিস। যত খেলবেন তত শিখবেন।’
সেটাই যদি হয়, মুমিনুলের টি-টোয়েন্টি শেখা আসলে কখনোই শেষ হওয়ার নয়। বিপিএল ছাড়া তো তাঁর এই ক্রিকেট খেলারই সুযোগ হয় না! এ নিয়ে অবশ্য মুমিনুলের তেমন মাথাব্যথা নেই বলেই মনে হলো, ‘জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলার চিন্তা আমি করি না। টেস্ট ও ওয়ানডে দলে থাকতে পারলেই খুশি। নির্বাচকেরা যোগ্য মনে করলে নিশ্চয়ই আমাকে সুযোগ দেবেন।’
টি-টোয়েন্টি নিয়ে চিন্তাভাবনাটা তাই বিপিএল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রাখছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ফ্র্যাঞ্চাইজি অনেক আশা করে, অনেক টাকা খরচ করে দলে নিয়েছে। সেটার প্রতিদান যেন দিতে পারেন, ‘বিপিএলে আমার একটাই লক্ষ্য, ফ্র্যাঞ্চাইজির কাছ থেকে যে টাকাটা পাব, ভালো খেলে সেটা যেন পুষিয়ে দিতে পারি।’
কাল প্রথম ম্যাচেই সেটা পেরেছেন। মুমিনুলের বিশ্বাস, এক বছর ধরে করা কষ্টের ফল পাবেন বাকি ম্যাচগুলোয়ও।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগামী আসর বসার কথা পাকিস্তানে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতেই টুর্নামেন্টের পর্দা উঠবে। তবে মূল ...
পাঠকের মতামত